নেপালের আন্দোলনকে বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনা ইন্ডিয়া টুডে’র
প্রকাশিত : ১৩:৪৯, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে গত তিন বছরে ঘটেছে বড় ধরনের পরিবর্তন। শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট, পাকিস্তানে ইমরান খানের পতন থেকে শুরু করে বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন—সব ক্ষেত্রেই এক পরিচিত দৃশ্য দেখা গেছে গণবিক্ষোভে সরকারের পতন। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো নেপাল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারির পর শুরু হওয়া আন্দোলনে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ২২ জন।
প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের প্রতিবাদে মানুষ রাস্তায় নামলেও দ্রুতই আন্দোলন রূপ নেয় দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভে। একপর্যায়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি ও রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাওডেল। সূত্র বলছে, অলি দেশ ছেড়ে দুবাই পালানোর পরিকল্পনা করছেন।
বিক্ষোভকারীরা ‘কেপি চোর, দেশ ছাড়’ স্লোগান দিতে দিতে রাজধানীতে তাণ্ডব চালায়। অলি, রাষ্ট্রপতি পাওডেল ও মন্ত্রিপরিষদের কয়েকজনের ব্যক্তিগত বাসভবন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। রুলিং পার্টির এক নেতার মালিকানাধীন কাঠমান্ডুর বিখ্যাত হিলটন হোটেলও আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া যায়।
শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের মতো একই চিত্র
২০২২ সালে শ্রীলঙ্কা ও ২০২৪ সালে বাংলাদেশেও একই ধরনের দৃশ্য দেখা গেছে। প্রথমে অর্থনৈতিক সংকট বা নির্বাচনী বিতর্ক, পরে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন—এভাবেই জনরোষে ঘেরাও হয় রাষ্ট্রপতির বাসভবন থেকে শুরু করে মন্ত্রীদের বাড়ি। শ্রীলঙ্কার গোতাবায়া রাজাপাকসে পালান মালদ্বীপে, আর বাংলাদেশ থেকে শেখ হাসিনা পালান ভারতে।
নেপালে দীর্ঘদিনের অস্থিরতা
২০০৮ সালে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করে প্রজাতন্ত্র হওয়ার পর থেকে নেপালে একের পর এক সরকার পরিবর্তন হয়েছে। গত ১৭ বছরে গঠিত হয়েছে ১৪টি সরকার, বেশিরভাগই জোট সরকার। বর্তমান প্রজন্ম ক্রমেই হতাশ হয়ে পড়ছে দুর্নীতি, অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও বেকারত্বে। এর মধ্যেই রাজনৈতিক নেতাদের সন্তানদের বিলাসবহুল জীবনধারার বিরুদ্ধে শুরু হয় ‘নেপো কিড’ আন্দোলন।
অলি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আরও বেড়ে যায় চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার কারণে। তিনি চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় এসে প্রথম বিদেশ সফরে যান বেইজিংয়ে, যা প্রচলিত রীতি ভেঙে দেয়। সাধারণত নেপালি নেতারা প্রথম সফরে ভারত যান। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে যোগ দিয়ে নেপাল ৪১ মিলিয়ন ডলার সহায়তা পায়।
ভূ-রাজনীতির ছায়া
চীনের প্রভাব বাড়তে থাকায় যুক্তরাষ্ট্রও সক্রিয় হয়ে ওঠে। ট্রাম্প প্রশাসন নেপালকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ‘মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কমপ্যাক্ট’ প্রকল্পে ফিরিয়ে আনে। এতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবের দ্বন্দ্ব নতুন মাত্রা পায়। অলি চীনের বিজয় দিবস প্যারেডে অংশ নেওয়ার পর থেকেই তাকে স্পষ্টতই মার্কিনবিরোধী শিবিরে দেখা হয়।
ফলে অনেকে মনে করছেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার পতনের মতো নেপালেও যুক্তরাষ্ট্র পর্দার আড়াল থেকে পরিবর্তনের খেলায় নেমেছে। বিশ্লেষক এসএল কান্তনের ভাষায়, ‘এটি শতভাগ মার্কিন প্রভাবিত বিপ্লব’।
অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার সঙ্গে সঙ্গে চীন-আমেরিকার ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা নেপালের বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও ঘনীভূত করেছে। প্রশ্ন উঠছে—নেপাল কি আরেকটি ভূরাজনৈতিক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হলো?
এসএস//
আরও পড়ুন